বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭ অপরাহ্ন

“সাওম ঢাল স্বরূপ”

মোঃ শফিকুল ইসলাম ,ঘাটাইল 
সাওম আরবি শব্দ। ফার্সি শব্দ রোযা।সাওম বা সিয়ামের  বাংলা অর্থ বিরত থাকা।ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সাওম হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, অশ্লীলতা ও ইন্দ্রীয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে নবিজী মদীনা থাকা অবস্থায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল করেছেন
يٰٓـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ
 عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَۙ‏
(সুরা বাকারা আয়াত ১৮৩)
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে , যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল , যাতে তোমরা মুত্তাকি  হতে পার।
রোজা বা সাওম সম্পর্কে মহান আল্লাহ আরও বলেন
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِىۡٓ اُنۡزِلَ فِيۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَيِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰى وَالۡفُرۡقَانِۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡكُمُ الشَّهۡرَ فَلۡيَـصُمۡهُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِيۡضًا اَوۡ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنۡ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّةَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰى مَا هَدٰٮكُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ‏ ١٨٥
রমজান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাজিল করা হয়েছে  লোকেদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের  সুস্পষ্ট বর্ণনা রূপে  এবং সত্য- মিথ্যার পার্থক্য কারীরূপে, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোযা পালন করে আর যে পিড়ীত কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময়  এ সংখ্যা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক  তা চান না যেন তোমরা মেয়াদ  পূর্ণ করতে পার, আর তোমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার। পবিত্র মাহে রমজান ধৈর্যের মাস । আর ধৈর্য  হল বেহেশতের চাবি। এই মাসে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে  দেওয়া হয়।
রমজান মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করার সমান সওয়াব পেল।। আর যে ব্যক্তি এই মাসে ১টি ফরজ আদায়  করল সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব তার আমল নামায় লিখিয়ে নিল।
রোজার আরবি নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
 বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত জেনে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন।
রোজা সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
الصِّيَامُ جُنَّةٌ فَإِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَجْهَلْ فَإِنْ امْرُؤٌ قَاتَلَهُ أَوْ شَاتَمَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي صَائِمٌ إِنِّي صَائِمٌ
‘রোজা (একটি) ঢাল, কাজেই তোমাদের যে কেউ রোজাদার হও, সে বাজে কথা বলবে না এবং বর্বরতার কাজ করবে না। যদি কোনো ব্যক্তি তাকে গালি দেয় অথবা কাটাকাটি- মারামারি করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ বুখারী
তাই রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদীস শরীফে একাধিক হাদীস বর্ণিত আছে হজরত আবু হুরায়রা  (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য—রোজা ব্যতীত। কারণ, রোজা আমার জন্যই এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব। মহানবী (স) আরও বলেন “রোজা ঢাল স্বরূপ”। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম  পালনের দিন অশ্লীলতায়  লিপ্ত না হয়  এবং ঝগড়া – বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয়  অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া  করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের  সুগন্ধের চেয়েও  সুগন্ধময় । রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশির মুহূর্ত  যা তাকে আনন্দিত করে।
এক যখন সে ইফতার করে তখন সে খুশি হয়  এবং দুই যখন সে তার পালনকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে  আনন্দিত হবে। (বুখারি) অন্য হাদীসে এসেছে  হজরত হুজায়ফা  (রা.) বলেন, আমি মহানবী (স)- কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের পরিবার, ধন- সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফেতনা ও গুনার  কাফফারা হলো নামাজ, রোজা ও সদকা।’ বুখারি
রমজানের রোজা ফরজ। হিজরতের দেড় বছর পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। বিপুল সাওয়াব ও অনুকম্পায় ঋদ্ধ করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি)
  সারাদিন সিয়াম সাধনার পর শুরু হয় ইফতারের প্রস্তুতি।আর ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকলে মহান আল্লাহ খুশি হন।আর ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় তাই এ সময় বেশি বেশি দো’আ ও ইস্তিগফার পড়া। আর বলা উচিত
اَللهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِيْ. رواه ابن ماجه، وقال البوصيري في الزوائد : هذا هديث صحيح، ورجاله ثقات.
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার সেই রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি যা সকল বস্তুতে পরিবেষ্টিত, তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
সারা দিন রোজা রাখার পর রোজাদারের জন্য ইফতারের মুহূর্তটা পরম আনন্দের। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।তিরমিজী
 যথা সময়ে ইফতার করা।যেন হেলায় ফেলায় কোনো অবস্থাতেই ইফতার কাজা হয়ে না যায়।
                ইফতারের দো’য়া
بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দো’য়া রিজিকের মাধ্যমে  ইফতার করছি।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে সাওম ভঙ্গের কারণ গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:
“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের  শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে” ।সূরা বাকারা।
কুরআন হাদিসে রোজার অনেক উপকারিতার কথা বলা হয়েছে । তন্মধ্যে সবচেয়ে  বড়  উপকারিতা হল তাকওয়া অর্জিত হওয়া।
রমজান মাসে সিয়াম সাধনার ফলে সমাজের লোকদের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয় এবং ধ্বনী গরিবের পার্থক্য নির্ণয় করতে সহজ হয়।। সাওম পালন করে একজন ব্যক্তি ক্ষুধার্ত থাকার ফলে সে অন্য আরেকজন অনাহারীর ক্ষুধার জ্বালা সহজে বুঝতে পারেন এবং ক্ষুধার্ত মানুষের মাঝে খাদ্য বিলিয়ে দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন । ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কীরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে।নিজে সিয়াম সাধনায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নিয়োজিত হব এবং পাশের জনকে উদ্বুদ্ধ করব ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |